সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৮ অপরাহ্ন
মহাকাশে ইতিমধ্যে ডানা মিলেছে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। আসছে সাফল্য। বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশ এখন ব্যবহার করছে স্যাটেলাইটটি। আশা করা যাচ্ছে আগামী ৯ বছরের মধ্যেই লাভের মুখ দেখতে শুরু করবে স্যাটেলাইটটি।
ফ্রান্স ভিত্তিক স্পেস রিসার্চ সংস্থা থালাস এলিনিয়ার তৈরি স্পেসবার-৪০০০ বি-১ স্যাটেলাইট মডেল প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর জিওস্টেশনারি যোগাযোগ স্যাটেলাইট যা বাংলাদেশ ছাড়াও এই অঞ্চলে থাকা বিভিন্ন দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি ৪২টি টিভি চ্যানেল এবং রেডিও স্যাটেলাইটটির ব্যবহার করছে পূর্ণমাত্রায়।
এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা সংস্থা, বাংলাদেশ আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থাসহ বেশ কিছু রাস্ট্রায়ত্ব সংস্থা বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট ব্যবহার করে আসছে। ডিটিএইচ সেবা প্রদানকারী বেসরকারি সংস্থা আকাশ এই স্যাটেলাইটের ৫টি ফ্রিকোয়েন্সী নিজেদের হাতে রেখেছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং আশেপাশের দেশগুলোতে ডিটিএইচ ব্যবসা বাড়াতে চায়।
শুধু বেসামরিক সংস্থা নয়, বাংলাদেশের আধা-সামরিক সংস্থা বিজিবি তাদের বর্ডার মনিটর ম্যানেজমেন্ট এবং কমিউনিকেশন এর জন্য বঙ্গবন্ধু -১ স্যাটেলাইট ব্যবহার করা শুরু করেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ তাদের বিওপি গুলোর সাথে টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম নয়, সেখানে এই স্যাটেলাইট যোগাযোগের মাধ্যমকে করেছে আরও বেশি নিরাপদ এবং সহজ। সামরিক বাহিনীর মধ্যে বাংলাদেশ সেনা এবং নৌবাহিনী বঙ্গবন্ধু -১ স্যাটেলাইট সিস্টেমের সাথে যুক্ত হয়েছে যা এদের তথ্য আদান প্রদানকে করেছে আরও বেশি নিরাপদ।
শুধু দেশী সংস্থা নয় বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশের বিভিন্ন মিডিয়া সংস্থা বর্তমানে বঙ্গবন্ধু -১ স্যাটেলাইট থেকে ভাড়া নেয়া ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো,
১) হন্ডুরাস – ২টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল।
২) তুরস্ক – ১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল।
৩) ফিলিপাইন- ১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল (আরও একটি চুক্তিবদ্ধ হয়েছে)।
৪) ঘানা – ২ টিভি চ্যানেল (আরও একটি সম্প্রচারের অপেক্ষায়)।
৫) ক্যামেরুন – ১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল।
৬) দক্ষিণ আফ্রিকা – ২টি অনলাইন ভিত্তিক টিভি চ্যানেল।
তবে এখানেই থেমে নেই বাংলাদেশের মহাকাশ যাত্রা। শুরু হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট পাঠানোর প্রক্রিয়া। আগামী ৬ বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে চায় বাংলাদেশ সরকার। এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার এর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড ২য় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সংক্রান্ত পরিকল্পনা এবং বাজেট নির্ণয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে।
শুধু বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটটিই নয়, ২০২৯ সালের মধ্যে আরো ২টি স্যাটেলাইট প্রেরণের পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ সরকার। ধারাবাহিক ভাবে ২০২৩ সালে ২য়, ২০২৭ সালে ৩য় এবং ২০২৯ সালে পাঠানো হবে ৪র্থ স্যাটেলাইটটি।
এদিকে বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটের ডিজাইন এবং উৎক্ষেপণসহ কারিগরি সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জেইন মেরিন সূক্ষ্ম। ২০২০ সালের নভেম্বরে ফ্রান্স রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সরকার প্রধান এর সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাৎকারে এই প্রস্তাবনা দেন।
অপরদিকে বাংলাদেশের ২য় স্যাটেলাইট তৈরি রক্ষণাবেক্ষণ এবং উৎক্ষেপণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে রাশিয়া ভিত্তিক স্পেস রিসার্চ সংস্থা গ্লাভকস্মস কোম্পানি। এই লক্ষ্যে ২০১৯ সালের অক্টোবরে গ্লাভকস্মস কোম্পানির ডেপুটি ডিরেক্টর ভিতালি সেভেনভ ৬ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ স্যাটেলাইট ইঞ্জিনিয়ার দল বাংলাদেশে আসে এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের সাথে বিভিন্ন ধরনের স্যাটেলাইট সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেন।
এ সময় বাংলাদেশ এ নিযুক্ত রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ এর ২য় স্যাটেলাইট প্রেরণের ব্যাপারে ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, রাশিয়া ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে তাদের একটি স্লট ভাড়া দিয়েছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের চাহিদা বিবেচনায় রাশিয়া আরও স্লট দিতে প্রস্তুত সেই সাথে বাংলাদেশকে চাহিদা অনুসারে যেকোনো ধরনের স্যাটেলাইট প্রেরণ করতে সক্ষম রাশিয়া। এ সময় রাশিয়ার স্যাটেলাইট বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎ স্যাটেলাইট তৈরিতে টেকনিক্যাল বিষয়গুলো সহায়তা প্রদান, জনবল প্রশিক্ষণ, স্যাটেলাইট এর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করন এবং স্যাটেলাইট তৈরি এবং উৎক্ষেপণ খরচ নিরূপণে পরামর্শক হিসাবেও কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার সংসদের এক প্রশ্ন উত্তর পর্বে বলেন, বাংলাদেশ সরকার তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসাবে ২০২৩ সাল নাগাদ ২য় স্যাটেলাইট প্রেরণে বদ্ধপরিকর। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশে থেকে ২য় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ব্যাপারে প্রস্তাব পেয়ে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটটি সরাসরি বাংলাদেশের উপর অবস্থান না করে কৌণিক ভাবে অবস্থান করছে তাই আমরা চাই আমাদের পরবর্তী স্যাটেলাইটটি জেনো অবশ্যই আমাদের ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী কাছাকাছি থাকে। বাংলাদেশ চায় তার ২য় স্যাটেলাইট যেন অবশ্যই নিজস্ব কক্ষপথে থাকে যার মালিকানা বাংলাদেশ এর হাতে থাকবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ এর প্রথম স্যাটেলাইট ফ্রান্সের থালাস এলেনিয়া স্পেস নির্মাণ করলেও ফ্রান্স চায় বাংলাদেশ ২য় স্যাটেলাইট ফ্রান্স ভিত্তিক বৃহৎ স্যাটেলাইট উন্নয়ন এবং উৎক্ষেপণ সংস্থা এরিয়ানস্পেস নির্মাণ করুক। এরিয়ানস্পেস ইউরোপের অন্যতম বড় স্যাটেলাইট নির্মাণ সংস্থা যারা স্যাটেলাইট নির্মাণ এর পাশাপাশি উৎক্ষেপণ করে থাকে। তারা মূলত Medium To Heavy স্যাটেলাইট নির্মাণ এবং উৎক্ষেপণের জন্য পরিচিত। সূত্র: ডিফেন্স রিসার্চ ফোরাম
আমেরিকা, বাংলাদেশ এবং বিশ্বের সর্বশেষ খবরের জন্য বাংলা নিউজডের ওয়েবসাইটে আসুন এবং আমাদের Bangla Newsday ফেসবুক পৃষ্ঠাটি সাবস্ক্রাইব করুন।